Ticker

6/recent/ticker-posts

রেফারেন্স লেখার নিয়ম। Elements of a Reference । রেফারেন্সের মৌলিক উপাদান


রেফারেন্স লেখার নিয়ম

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সবাই মোটামুটি কম বেশি এসাইনমেন্ট করে থাকি। এসাইনমেন্ট এর ক্ষেত্রে অনেক সময় রেফারেন্সের বিষয়টা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা না হলেও গবেষণাপত্রে প্রয়োজনীয় প্রতিটা ক্ষেত্রে রেফারেন্স উল্লেখ করা খুবই জরুরি। লেখার ক্ষেত্রে সঠিক রেফারেন্স উল্লেখ না করলে গবেষণাপত্রের কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু বিড়ম্বনা তৈরি অন্য জায়গায়। অনেকে তথ্যের সঠিক উৎস খুঁজে পেলেও সেটাকে গবেষণাপত্রে ঠিকঠাক সাজিয়ে তুলতে পারেন না। মূলত সমস্যাটা আরো বেশি তীব্র হয় যখন আপনি গবেষণায় নতুন। আর সমস্যা হবেই বা না কেন? পৃথিবীব্যাপি বেশ কিছু রেফারেন্স স্টাইল বিদ্যমান রয়েছে যাদের প্রত্যেকের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল। এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন উৎসের রয়েছে আবার ভিন্ন ভিন্ন ধরণ। যেমন, গবেষণাপত্র, বই, নিউজ আর্টিকেল, ওয়েবসাইট আর্টিকেল ইত্যাদি প্রতিটার রেফারেন্স স্টাইল ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।


গবেষণাপত্রে এই রেফারেন্স বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য Mendeley Desktop, Docear, Zotero এর মত অনেক জনপ্রিয় রেফারেন্স ম্যানেজার সফটওয়্যার পাওয়া যায়। যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই একজন গবেষক রেফারেন্স লিখে নিতে পারেন। রেফারেন্স ম্যানেজার সফটওয়্যার থাকলেও একজন গবেষক হিসাবে রেফারেন্সের বেসিক ইলিমেন্টস বা স্টাইল সম্পর্কে খুব ভালো একটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। এছাড়া অনেক সময় এই সফটওয়্যার গুলোতে ম্যানুয়ালি রেফারেন্স এর তথ্য দিতে হয়। সেক্ষেত্রেও রেফারেন্স সম্পর্কে চাই ভালো ধারণা।

আসলে বিভিন্ন রেফারেন্সের ধরণ বা নিয়ম ভিন্ন হলেও সব রেফারেন্সেই কিছু কমন ইলিমেন্টস থাকে যেগুলো সাধারণত সব ধরণের রেফারেন্স লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে। এই ইলিমেন্টসগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখাটা এই জন্য জরুরি যে সব রেফারেন্সই এই ইলিমেন্টস দিয়েই গঠিত হবে। মূল পার্থক্য থাকে সামান্য কিছু জায়গায় যেটা পরবর্তিতে বিভিন্ন রেফারেন্স দেখলেই বুঝে নেয়া যাবে।

একটা রেফারেন্সে সাধারণত নিচের ইলিমেন্টস গুলো থাকেঃ-

1.    Author

2.    Title

3.    Volume/Issue

4.    Journal/Source Name

5.    Place of publication/Publisher

6.    Editor

7.    Date of publication

8.    URL/DOI/Provider

প্রতিটা রেফারেন্স এ যে সবগুলো ইলিমেন্টস থাকবে সেটা কিন্তু না। আপনি কোন উৎসকে (বই, গবেষনপত্র, সগবাদপত্র, রিপোর্ট, ইত্যাদি) রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করছেন সেটার উপরে নির্ভর করবে রেফারেন্সে কোন কোন উপাদান থাকবে। আর হ্যাঁ, এর বাইরেও দুই একটা ইলিমেন্টস থাকতে পারে।


Authors Name

রেফারেন্স স্টাইলের উপর নির্ভর করে Authors Name এর ক্ষেত্রে last name এবং first name(s) অথবা initial(s) এর মাধ্যমে গবেষণাপত্র, বই বা অন্য যে কোন কিছুর লেখকের নাম চিহ্নিত করা হয়। সেক্ষেরে একের অধিক Author থাকলে কিভাবে সেটা রেফারেন্সে লিখতে করতে হবে সেটা নিদিষ্ট রেফারেন্স স্টাইলে উল্লেখ করা থাকবে। বেশীরভাগ রেফারেন্স স্টাইলে সাধারণত Author এর Last name আগে থাকে এর পরে First name বা First name এর সংক্ষিপ্ত রুপ লিখতে হয়। তবে কিছু কিছু রেফারেন্স এর ক্ষেত্রে প্রথমের Author এর ক্ষেত্রে এই নিয়ম ঠিক রেখে বাকি অথরের নামে প্রথমে First name ও পরে Last name দেয়া হয়।

রেফারেন্সে Authors Name লেখার সময় সাধারণত সোর্সের মত করেই সিরিয়াল উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ যে সোর্স আপনি রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করবেন সেখানে Authors name যেভাবে সাজানো আছে রেফারেন্সেও সেই একই সিরিয়ালে সাজাতে হবে। সোর্সে যার নাম আগে থাকবে রেফারেন্সেও তার নাম আগে আসবে এবং সোর্সে যার নাম সবার শেষে রেফারেন্সেও তার নাম শেষে থাকবে।

Research Methodology Course 

Title of the Source

রেফারেন্স ভেদে টাইটেল লেখার নিয়মে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। কোন কোন রেফারেন্স স্টাইলে সোর্সের টাইটেল (বই, গবেষণাপত্র, সংবাদ, রিপোর্ট, ইত্যাদি) capitalised এবং italicised হওয়ার বিষয়ে বলা থাকে। কিছু স্টাইলে, বিশেষ করে গবেষণাপত্রের টাইটেল capitalised হতে হলা হয়ে থাকে এবং quotation marks এর ভেতরে রাখতে বলা হয়। আবার অনেক রেফারেন্স স্টাইল quotation marks দিতে না করে। মূল কথা হলো রেফারেন্সে সোর্সের টাইটেল উল্লেখ থাকবে এবং সেটা ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে হতে পারে।

 


Figure: Core Components of a Reference

Image source: Mendeley.com


Journal/Source Name

টাইটেলের পরের অংশে সাধারণত থাকবে জার্নাল বা সোর্সের নাম। অর্থাৎ, আপনি যে গবেষণাপত্র বা আর্টিকেল থেকে তথ্য নিলেন সেটা যে জার্নাল বা ওয়েব সাইটে পাবলিশ হলো সেটার উল্লেখ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের জার্নাল, আর্টিকেল বা সংবাদপ্ত্র প্রকাশিত হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের/ওয়েবসাইটের নাম ব্যবহার হয়।


Volume/Issue

সাধারণত গবেষণাপত্র প্রকাশ করে এরকম জার্নাল প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সংখ্যকবার গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সেটা হতে পারে প্রতি মাসে একবার, প্রতি তিনমাসে, চার মাসে, ছয়মাসে বা বছরে একবার। একটা নির্দিষ্ট বছরের যত নম্বর সংখ্যা থেকে আপনি গবেষণাপত্রটি পেলেন সেটাই হচ্ছে Issue নম্বর।

অন্যদিকে Volume হচ্ছে জার্নালের প্রকাশনির বছর সংখ্যা। যেমন কোন জার্নাল যদি ২০১৫ সালে প্রথম যাত্রা শুরু করে তাহলে ২০১৭ সালের Volume সংখ্যা হবে ৩। অন্য দিকে ২০১৭ সালে যদি তারা ১২ তম সংখ্যা প্রকাশ তাহলে Issue সংখ্যা হবে ১২।

বেশিরভাগ রেফারেন্সে গবেষণাপত্রের Volume ও Issue নম্বর উল্লেখ করতে হয়। তবে অনেক সময় শুধু Volume নাম্বারও চাইতে পারে। এক্ষেত্রে যদি Volume ও Issue দুইটা চায় তাহলে বেশিরভা সময়ে 3(12) যেখানে ৩ হচ্ছে Volume নম্বর এবং ১২ হচ্ছে Issue নাম্বার। গবেষণাপত্রে সাধারণত Volume ও Issue নাম্বার উল্লেখ থাকে।

গবেষণাপত্রের বাইরে আসলে অন্য কিছুতে Volume ও Issue নাম্বার থাকে না। তবে অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ পত্রের ক্ষেত্রে মাস ও তারিখ উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় একই স্টাইলে। যেমন যদি কোন তথ্য আপনি মার্চ মাসের ২৩ তারিখের সংবাদপত্র থেকে নিয়ে থাকলে রেফারেন্সে সেটা 3(23) আকারে লেখা হবে যেখানে ৩ হচ্ছে মাস আর ২৩ হচ্ছে তারিখ। তবে সেটাও জার্নালের প্রয়োজন বা রেফারেন্স স্টাইল অনুসারে করা হয়।


Place of publication and Publisher

বই ও রিপোর্ট যখন কোন তথ্যের সোর্স হিসাবে ব্যবহার করা হয় তখন রেফারেন্স লেখার ক্ষেত্রে Place of publication উল্লেখ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে শুধু মাত্র দেশের নাম এবং অনেক সময় দেশের সাথে যে নির্দিষ্ট জায়গায় বা শহরে পাবলিশ হয়েছে সেটার নাম উল্লেখের প্রয়োজন হয়।

একই সাথে বইকে সোর্স হিসাবে ব্যবহার করলে Publisher/publishing company এর নাম উল্লেখ করা হয়। সাধারণত Publisher/publishing company এর পরেই Place of publication এর নাম উল্লেখ করতে হয়। তবে রেফারেন্স স্টাইল উপর নির্ভর করে ভিন্নও হতে পারে।


Editor

অনেক সময় কিছু জার্নাল বিভিন্ন কারনে edited volume বের করে। সেক্ষেত্রে edited volume এ বুক চ্যাপ্টার হিসাবে গবেষকেরা তাদের গবেষণা Publish করেন। এরকম ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সময় সাধারণ গবেষণাপত্রের মতই রেফারেন্স লিখলেও অনেক রেফারেন্স স্টাইল বা জার্নাল Editor এর নাম উল্লেখ করতে বলেন। Editor কিভাবে উল্লেখ করবেন সেটা সংশ্লিষ্ট রেফারেন্স স্টাইলে উল্লেখ থাকে।


Date of publication

বই, গবেষণাপত্র, সংবাদপত্র বা অন্যকিছু যেটাই হোক না কেন, রেফারেন্সে উক্ত সোর্স Publish হবার বছর উল্লেখ করতে হয়। গবেষণাপত্রের ক্ষেত্রে Publish হবার সালের পাশাপাশি Volume/Issue উল্লেখ করা হয় এবং নিউজ বা ব্লগ পোস্টের ক্ষেত্রে মাস/তারিখ উল্লেখের প্রয়োজন হয়।

বইয়ের ক্ষেত্রে যদি একাধিক Edition থেকে থাকে তাহলে যে Edition থেকে আপনি তথ্য নিলেন সেই Edition Number (i.e. 2nd edi.) উল্লেখ করতে হয়। এক্ষেত্রে Year, Volume, Issue, Month, Day, Edition কিভাবে লিখবেন সেটা সংশ্লিষ্ট রেফারেন্স স্টাইলে উল্লেখ থাকে।


Url/DOI/Provider

এখনের বেশীরভাগ সোর্স আমরা electronically পেয়ে থাকি, হোক সেটা গবেষণাপত্র, বই, সংবাদ বা ব্লগ পোস্ট। সেক্ষেত্রে অনেক জার্নাল ও রেফারেন্স স্টাইল সোর্স এর url (the Internet address) উল্লেখ করতে বলেন। আবার গবেষণাপত্রের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় DOI (document object identifier) number উল্লেখ করতে রিকমেন্ড করে থাকেন। তবে DOI (document object identifier) নাম্বার উল্লেখ করলে আলাদা ভাবে url দেবার প্রয়োজন নেই।

এগুলো পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে গবেষণাপত্র বা বইয়ের পেজ নাম্বার উল্লেখ করতে দেখা যায়।


রেফারেন্স বাদে আমরা কখনোই একটা গবেষণাপত্র চিন্তা করতে পারিনা। তাছাড়া এই রেফারেন্স সেকশনটাই সম্ভবত খুব পীড়াদায়ক সেকশন যেটা কিনা ঠিকঠাক ম্যানেজ করা কঠিন। অন্যদিকে জার্নালে গবেষণাপত্র সাবমিট করার সময় তাদের রিকমেন্ডেড রিফারেন্স স্টাইল ঠিকঠাক ফলো না করলে বেশিরভাগ সময় তারা গবেষণাপত্র রিজেক্ট করে দেন।

এই আর্টিকেলটা রেফারেন্স লেখার প্রতিটা খুঁটিনাটি অংশ তুলে না আনলেও, রেফারেন্সের বেসিক ইলিমেন্টস সম্পর্কে আপনাকে ভালো একটা ধারণা দিবে । পরবর্তীতে বিভিন্ন স্টাইলে রেফারেন্স দেখলে আপনি ঘুরে ফিরে এই ইলিমেন্টসগুলোই পাবেন।

Post a Comment

0 Comments