লিটারেচার রিভিউ বা সাহিত্য পর্যালোচনা হচ্ছে গবেষণার অত্যাবশকীয় একটি অংশ। প্রতিটা গবেষণা শুরু করার সময়ে একজন রিসার্চার লিটারেচার রিভিউ করে থাকেন। কোন কোন পেপারে সেটি দৃশ্যমানভাবে আলাদা সেকশন করে দেয়া হয়, অন্যান্য পেপারে সেটি ইন্ট্রোডাকশনের সাথে জুড়ে থাকে।
তাহলে লিটারেচার রিভিউ কাকে বলে? এটা লিখতেই বা হয় কিভাবে?
যদি আপনি আক্ষরিক অর্থ চিন্তা করে শব্দ দুটিকে ভাঙেন তাহলে যে দুটো শব্দ পাচ্ছেন "Literature" এবং "Review", মানে হচ্ছে সাহিত্য পর্যালোচনা। আপনার পছন্দের সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করার সময়ে সেই একই বিষয়ে অন্যান্যদের কাজগুলোকে পর্যালোচনা করা(যেমনঃ বই, জার্নাল, আর্টিকেল, রিপোর্ট, পেপার ইত্যাদি), সেগুলোর পরিমার্জিত সংযোজন, এবং সেটি দ্বারা আপনার পেপারটিকে আরো সমৃদ্ধ করাই হচ্ছে লিটারেচার রিভিউ বা সাহিত্য পর্যালোচনা।
লিটারেচার রিভিউ বা সাহিত্য পর্যালোচনা কেন করতে হয়?
- অন্যান্য গবেষকদের কাজগুলো দেখে তাদের লিমিটেশন বা গ্যাপ নিয়ে আপনার কাজ করার সুযোগ পাওয়া
- গবেষকদের কাজের ধরন দেখে সম্ভাব্য সুবিধা অসুবিধা আগে থেকেই চিহ্নিত করতে পারা
- আপনার কাজের ফলাফলের সাথে অন্যান্য গবেষকদের কাজের কতটা মিল বা অমিল আছে, সেটা পাঠকের কাছে তুলে ধরা
- সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অনুধাবনে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি পাঠকের সামনে নিয়ে আসা
- লিটারেচার রিভিউ দ্বারা আপনার কাজ সম্পর্কে আপনার জ্ঞান আরো মজবুত করা
- পূর্বের সময় থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত তথ্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা
- এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
- দ্বিত্বতা এড়ানো
লিটারেচার রিভিউ কিভাবে লিখবেন বা লিটারেচার রিভিউ লেখার নিয়ম কি?
লিটারেচার রিভিউ লিখার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি আপনার পেপারে কোন ধরনের রিভিউ লিখবেন। সেটি হতে পারে-
- Chronological
- Thematical
- Methodological
Chronological Literature Review অনেকটাই “To the point” ধরনের হয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, গবেষক যখন একটা টেবিলে পূর্ববর্তী গবেষণার সময়/সাল, গবেষণার ধরণ, গবেষণায় ব্যাবহৃত মেথডস, তাদের zest findings গুলো সুস্পষ্টভাবে পালাক্রমে তুলে ধরেন, সেটা তখন হয়ে যায় Chronological Literature Review.
Thematical Literature Review বলতে এই নামটা পড়ে আপনি যা অনুমান করছেন, অনেকটা তাই। যেকোন একটি থিমের উপরে সময়ের পরিক্রমায় গবেষণার ধরণের যা কিছু পরিবর্তন, সমস্যা, চ্যালেঞ্জ, ফাইন্ডিংস, ইত্যাদি নিয়েই Thematical Literature Review গঠিত হয়।
গবেষণায় হাতেখড়ির জন্য ব্যবহার করতে পারেন নিচের এপ্সটি
এখানে ক্লিক করুন
সবশেষ, Methodological Literature Review কেবল গবেষণায় ব্যবহৃত মেথডসগুলোর উপরে ফোকাস করে। আপনি একজন গবেষক হিসেবে যখন আপনার পেপারে একই বিষয়ের ওপর পূর্বের সকল গবেষণার মেথডসগুলো একত্রিত করে নিয়ে আসবেন, সেটি হবে তখন আপনার পেপারের Methodological Literature Review.
তো আপনি এখন কি করতে পারেন? আপনি যেই বিষয়ে গবেষণা করবেন বলে মনস্থির করেছেন সেটির উপর পড়াশোনা করুন। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো আলাদা করে নোট করুন। আরো সহজ হবে যখন আপনি একটি টেবিল ব্যাবহার করবেন। সেই টেবিলে গবেষণার সাল, অথর নেম, অবজেক্টিভস, মেথডস, ফাইন্ডিংস ইত্যাদি সকল প্রয়োজনীয় তথ্য নোট করুন। এবার আপনার পেপারের ধরণ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন কোন ধরনের লিটারেচার রিভিউ আপনি লিখবেন। মনে মনে ডিজাইন করে ফেলুন, আর শুরু করে দিন।
পরিশেষে, যখন একের পর এক তথ্য থরে থরে গবেষকের সৃষ্টিশীলতা দিয়ে নিখুঁতভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করতে পারবেন, রিভিউ তত সুন্দর হবে। রিভিউ লিখার ধরন এমন হতে হবে যেন পাঠকের কাছে গল্পের মত মনে হয়। যেটি একটি সময়ভিত্তিক গল্প। ধরুন আপনি পানির সাথে ম্যালেরিয়ার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন। আপনার লিটারেচার রিভিউ হতে পারে এ সম্পর্কে পূর্বে কখন প্রথম কাজ হয় এবং সেটার ফাইন্ডিংস কি হয়েছিলো সেটি নিয়ে আসা, এরপর সময়ে সময়ে কত ধরনের কাজ হয়েছে, সেইসাথে সেগুলোর ফাইন্ডিংস একে অন্যের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত সেটিকে চিহ্নিত করা।
এমনকি আপনি অনেক গবেষণা পাবেন যেগুলোর ফাইন্ডিংস হুবুহু একই ছিলো। আপনার এভাবে ক্রমে ক্রমে সাজিয়ে তোলা লিটারেচার রিভিউ এর গাঁথুনিই আপনার পেপারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, সেইসাথে পেপারের গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। কেননা লিটারেচার রিভিউ এমন একটি সেকশন, যেখানে প্রতিটি গবেষকের জন্য তথ্য একই, কিন্তু কে কত সুন্দর এবং যৌক্তিকভাবে সেটিকে তুলে ধরবে, এই জায়গায় আপনার নিজেকে প্রমাণ করার সর্বোচ্চ স্বাধীনতা থাকে। তাই চেষ্টা করবেন আপনার পেপারের লিটারেচার রিভিউ যেন এমন হয়, যেটি সাবলীলভাবে আপনার পাঠকদের আপনার পেপারের যৌক্তিকতা বর্ণনা করে যায়।
0 Comments