Ticker

6/recent/ticker-posts

কিভাবে গবেষণায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন

গবেষণায় কিছুদূর আগোনোর পর থেমে গেছেন? অথবা, কোন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না?

তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই। চলুন জেনে নেয়া যাক আমরা গবেষণা শুরু করতে গিয়ে কি কি অসুবিধায় পড়ি এবং সমাধান কি হতে পারে।

নতুন গবেষকদের জন্য গবেষণা শুরু করা খুবই দারুণ একটা ব্যাপার কিন্তু একইসাথে একটা চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা হতে পারে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আমাদের মাঝ পথে থেমে যেতে হয়। সেটা হতে পারি আগ্রহের অভাব অথবা সঠিক গাইডলাইন না পাওয়া। এই পোস্টে আমরা নতুন গবেষকদের জন্য এই সমস্যাগুলোর আলোচনা করব একইসাথে তাদের সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

উদ্দেশ্য নির্ধারণের অভাব

বেশিরভাগ সময় নতুন গবেষক আবেগপ্রবণ হয়ে গবেষণা শুরু করেন। যেমন আমার বন্ধু গবেষণা করছে বা তার দুই একটা পাবলিকেশন আছে সুতরাং আমারও দুই একটা থাকা চাই। আবার গবেষণাপত্রে নিজের নামটা লেখা দেখলে গবেষক গবেষক একটা ভাব আসে নিজের মধ্যে। অথবা বন্ধু মহলে একটা আলাদা গুরুত্ব পাওয়া যায়। কারন যেটাই হোক, একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে আমাদের, যে দুনিয়াতে গবেষণা না করেই বেশিরভাগ মানুষ সফল হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি গবেষণাকে ধারণ করতে না পারেন তাহলে শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে নিজের অন্য স্কিলে জোর দিতে পারেন। উদ্দেশ্যহীন গবেষণা সাধারণত মাঝপথে থেমে যায়। সুতরাং আপনি ঠিক কি কারণে গবেষণা করতে ইচ্ছু এই বিষয়টা খুবই স্পষ্ট থাকা চায়।

সমাধান

গবেষণা শুরু করার আগে স্পষ্টভাবে আপনার গবেষণার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি কেন গবেষণা শিখতে চাচ্ছেন, এই দক্ষতা কীভাবে আপনার ক্যারিয়ারে হেল্প করবে অথবা এই দক্ষতা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। যদি সুস্পষ্ট লক্ষ বা উদ্দেশ্য না থাকে থাকে আপনি কিছুদিন পরেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। অনেক কে দেখেছি যে গবেষণা তাদের এক প্রকার নেশা। বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নেই তাদের। কিন্তু গবেষণা ব্যাপারটাই তাদের কাছে পছন্দের। এরকম কিছু হলেও ধরে নিতে পারেন আপনি সঠিক পথেই আছেন। তাই আর দেরি না করে কাগজ কলম নিয়ে গবেষণা শেখার উদ্দেশ্য স্পেসিফিক করে ফেলুন।




সুপারভাইজারের অভাব

গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একজন সুপারভাইজার বা মেন্টর। সুপারভাইজার ছাড়া এই পথে চলা শুরু করলে আপনার জন্য পথটা খুব একটা সহজ হবে না। এ কারনে নতুন অনেক গবেষক সুপারভাইজারের অভাবে পথ হারিয়ে ফেলেন। এখানে সমস্যা মূলত দুইধরনের। প্রথমত, আমাদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারনে আমাদের শিক্ষকেরা ছাত্রদের আলাদা করে গবেষণার পদ্ধতি না গবেষণার মৌলিক বিষয় শেখানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পান না। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ছাত্রদের দিক থেকে। প্রথম দিকে ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছে গিয়ে গবেষণায় খুব আগ্রহ দেখালেও কিছুদিন পরে ছাত্রদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই খুঁজে না পাবার কারণ কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ ঠিক না করে অতি ইমোশনাল হয়ে গবেষণায় আগ্রহী হওয়া। যাহোক মূল আলোচনায় আসি। শিক্ষকেরা ছাত্রদের এরকম ব্যবহারে হতাশ হয়ে পরবর্তীতে আর কাউকে সহজে সুযোগ দিতে ইচ্ছা পোশন করেন না। এতে করে বাকিরাও সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলে। এবং আন্ডারগ্রেড লেভেলে শিক্ষকদের সাথে গবেষণা করার সুযোগ কমে আসে।

সমাধান

যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা ক্লাস এবং নিজেদের গবেষণা নিয়েই ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যান সেহেতু আমাদের একজন বিকল্প সুপারভাইজার খুঁজে রাখতে হবে। প্রয়োজনে অন্য বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য কোনও সুপারভাইজারের সাহায্য নিতে পারেন। আপনি খুব বেশি আগ্রহী থাকলে যে কেউই আপনাকে সুপারভাইজ করতে চাইবেন। সুতরাং কোন শিক্ষক ব্যস্ততার কারণে আপনাকে সময় দিতে না পারলে আপনার গবেষণা যেন থেমে না যায় সে কারণে বিকল্প প্ল্যান রাখতে হবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি হিসাবে আপনার যে সকল সহপাঠী ও সিনিয়রদের গবেষণা সম্পৃক্ততা আছে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন। তারা অনেক সময় ভালো দিকনির্দেশনা দিতে পারে। এই দুই শ্রেণীর মানুষ আপনার বিপদের সময়ে সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে। এখানে একটা সমস্যা আছে। আমরা সেলফ ইগোর কারণে আমাদের বন্ধুদের থেকে সহজে শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করি না। এতে মূলত আমাদেরই লস বেশি হয়। সুতরাং সেলফ ইগো আপাতত পাশে রেখে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। পাশাপাশি, বর্তমান সময়ে অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবেষণার বিভিন্ন ধাপ এবং পদ্ধতি নিয়ে গাইডলাইন পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে নিজে নিজেই অনেক কিছু শেখার সুযোগ থাকে এবং কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ত থাকা যায়। সুতরাং আপনি অনলাইন প্লাটফর্ম কে আপনার গবেষণা শেখার একটা গুরুত্বপূর্ণ অপশন হিসাবে ধরতে পারেন।

গবেষণার পদ্ধতি না জানা

আমরা মাঝে মাঝে অতি উৎসাহী হয়ে গবেষণা শুরু করি। যার কারনে আমাদের অনেকেরই পূর্ববর্তী কোন জ্ঞান বা ধারণা থাকে না। এ কারনে বেশিরভাগ সময় গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা না জেনেই শুরু করি। এতে করে সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে অনেক গবেষক মাঝ পথে থেমে যান। সঠিক পদ্ধতি না জানার কারনে আমরা দীর্ঘসুত্রিতায় আটকে যাই। অথবা কোন কূল কিনারা খুঁজে পাইনা। যেহেতু সঠিক পদ্ধতি ছাড়া গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সুতরাং গবেষণা শুরুর আগে আপনাকে গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে বেসিক লেভেলের ধারণা নিতে হবে।

সমাধান

প্রথমত গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য প্রশিক্ষণ, কোর্স বা ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করুন। সেটা হতে পারে অনলাইন বা অফলাইন যে কোন টা। সরাসরি কোর্সে অংশগ্রহন করাটা খুব জরুরি। এতে আপনি আপনার না জানা প্রশ্নগুলোরও উত্তর পেয়ে যাবেন।

দ্বিতীয়ত গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বই ও জার্নাল পড়ুন বেশি করে। এতে গবেষণার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়। প্রথম ধাপের পাশাপাশি এই ধাপও গুরুত্বপূর্ন। বইয়ের পাশাপাশি আপনার ফিল্ডের কিছু গবেষণাপত্রও দেখতে পারেন মাঝে মাঝে। এতে আপনি চলমান গবেষণা সম্পর্কে আপডেটেড থাকবেন।

ফাইনালি, ইউটিউব সহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কিত বা গবেষণাপত্র লেখা সম্পর্কিত অনেক ভিডিও এবং কোর্স আছে, সেগুলো দেখুন। এতে করে আপনি খুব বিস্তারিত ধারণা পাবেন। অনলাইন প্লাটফর্মে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শেখানোর কারণে আপনি ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে ধারণা নিতে পারবেন। এতে করে আপনার চিন্তা ধারা প্রসারিত হবে।

সময় ব্যবস্থাপনা

যেহেতু বেশিরভাগ নতুন গবেষক আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট সেহেতু টাইম ম্যানেজমেন্টে নিয়ে খুব ঝামেলায় পড়ে যায়। গবেষণা শুরু করার আগেই ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ফাইনাল পরীক্ষা এই সব হাজির হয়। এই সময়ের ম্যানেজমেন্টের অভাবে অনেক গবেষক মাঝ পথে থেমে যান। এক্ষেত্রে গবেষণাকে চালিয়ে নিতে আপনাকে সময়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক হতে হবে। আন্ডারগ্রেডে সঠিকভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে না পারলে শুধু গবেষণা নয়, যেকোন নতুন স্কিল অর্জন করতে গেলেই আপনাকে অসুবিধায় পড়তে হবে।

সমাধান

এক্ষেত্রে একটি বাস্তবসম্মত সময়সূচি তৈরি করুন এবং সেটার উপর ভিত্তি করে কাজ করুন। যেহেতু আপনার ক্লাস পরীক্ষার শিডিউল আপনি জানেন সেহেতু আপনাকে সেভাবে ডিজাইন করতে হবে সবকিছু। বন্ধু আড্ডা এই সব কিছুর মধ্যেই আপনাকে টাইম বের করে নিতে হবে। যেমন ধরেন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে গল্প করার টাইমটা একটু পিছিয়ে দিলেন। রুমে চা বা কফি বানিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা গবেষণায় সময় দিলেন। অথবা সকালে ঘুম থেকে একটু আগেভাগে উঠে কফি নিয়ে বসে গেলেন। পরীক্ষার সময় একটা সুন্দর টেকনিক অ্যাপ্লাই করবেন। সাধারণত একটা পরীক্ষার পরে দুই এক দিন বন্ধ থাকে। পরীক্ষা দিয়ে এসে সাধারণত ঐরাতে পড়া হয়না সহজে। মাঝের এই সময়টা আপনি কাজে লাগাবেন। অর্থাৎ আপনাকেই আপনার সুবিধামতো সময় বের করে নিতে হবে। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, ক্যারিয়ারের সাথে কখন কম্প্রমাইজ করবেন না। যা কিছুই করেন না কেন আপনার স্কিলের জন্য আপনাকে সময় বের করতে হবে। আমার এক সিনিয়র বড় ভাই ছাত্র রাজনীতি করতেন। যার কারনে ভাইকে গভীর রাতে রুমে ফিরতে হতো। ভাই যা কিছুই করুক না কেন, উনি রুমে ফিরে দুই ঘন্টা পড়াশোনা করে এর পরেই ঘুমাতেন। ভাইয়ের এই স্ট্রাটেজি আমার খুব দারুন লাগতো। বর্তমানে ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। আপনারা চাইলেও এই স্ট্রাটেজি ফলো করতে পারেন।

অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট

এইটা বহুল প্রচলিত একটা প্রবাদ। এর অর্থ হল কোনো কাজে অনাবশ্যক বেশি কর্মী জুটলে মতভেদের কারণে সে কাজ পণ্ড হয়ে যায়। আপনি গবেষণা শুরু করতে গেলে দেখবেন সাব্বির, ফারহান, মিমি, রিতু এরকম অনেকেই জুটে যাবে। তাদের দিয়ে বিশাল আলোচনাও হবে ক্যান্টিনে। এই প্রক্রিয়ায় এগোলে ক্যান্টিনে বসে শুধু কফিই খাওয়া হবে আর তৈরি হবে মতভেদ। কেউ বলবে মেজটিলা থেকে স্যাম্পল নিতে, আর একজন বলবে উপশহর থেকে। এর মধ্যে অন্যজন বলবে মীরাবাজার থেকে। এদের মধ্যে আবার দুইজন থাকবে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড। তারা আবার ঝগড়াঝাঁটি করে ঐ দিনে বা রাতে সময় দিতে পারবে না। তাদের ঝামেলা মেটাতে গিয়ে আবার আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা তৈরি হবে।

সমাধান

এই সমস্যা এড়াতে চাইলে প্রথম দিকে আপনাকে শুধু একাই এগোতে হবে। বেশি হলে দুইজন এবং কোন ভাবেই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড না। দুইজন বা একজন হলে আপনি আপনার সুবিধামতো সময়ের অপটিমাম ইউজ করতে পারবেন। সুতরাং প্রথম দিকে বেশি জ্ঞানী মানুষ যুক্ত না করাই বেটার। নিজে চিন্তা করুন, প্রয়োজনে সুপারভাইজার বা সিনিয়রের হেল্প নেন। দেখবেন দ্রুত এগোতে পারবেন। আপনার নিজস্ব চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটবে।

 

 

গবেষণা যতটা না কঠিন তার থেকে বেশি সিস্টেমেটিক প্রক্রিয়া। উপযুক্ত পরিকল্পনা, পদ্ধতি এবং দিকনির্দেশনার মাধ্যমে নতুন গবেষকরা তাদের গবেষণায় সফল হতে পারেন। উপরের সমাধানগুলো অনুসরণ করলে মাঝ পথে থেমে যাবার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। গবেষণার প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য মনোযোগ দিন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য নিন। আপনার গবেষণার উদ্দেশ্য এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে শুরু করলে সফলতা অর্জন সহজ হবে। নিজের সমস্যাগুলো নিজে চিন্তা করে সমাধানের চেষ্টা করুন এবং সবশেষে লেগে থাকুন দারুণ ভাবে।

Post a Comment

0 Comments