Ticker

6/recent/ticker-posts

গবেষণায় পরিসংখ্যান শেখার গুরুত্ব ও নতুন গবেষকদের জন্য পরিসংখ্যানে দক্ষ হওয়ার উপায়

গবেষণার জগতে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নতুন গবেষকদের জন্য পরিসংখ্যান শেখা আরো বেশি অপরিহার্য, কেননা সঠিক পরিসংখ্যানই গবেষণার ভিত্তি গড়ে দেয়। তাছাড়া আপনার গবেষণার গ্রহণ যোগ্যতাও কিন্তু পুরোটা নির্ভর করে সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবহারের উপর।  সুতরাং চলুন দেখে নেয়া যাক, গবেষণায় পরিসংখ্যান কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে একজন নতুন গবেষক পরিসংখ্যানে দক্ষ হতে পারে।

গবেষণায় পরিসংখ্যান শেখার গুরুত্ব

১. ডেটা এনালাইসিস ও ব্যাখ্যা

পরিসংখ্যান ছাড়া ডেটা এনালাইসিস ও এর ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। সঠিক পরিসংখ্যান ব্যবহার করে আমরা ডেটার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অর্থ বের করতে পারি এবং তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। অর্থাৎ ডেটার ভাষা বুঝতে গেলে আপনাকে অবশ্যই পরিসংখ্যান জানতে হবে। না হলে আপনার গবেষণার অন্তর্নিহিত অর্থ বলতে গেলে অজানাই থেকে যাবে।

২. গবেষণার নির্ভুলতা

পরিসংখ্যানের সাহায্যে আমরা গবেষণার ফলাফলগুলো সঠিক নাকি ভুল সেটা যাচাই করতে পারি। কোন হাইপোথিসিস সঠিক, কোনটা নয়, তা নির্ধারণে পরিসংখ্যানের ভূমিকা অপরিসীম। অর্থাৎ, সঠিক ফলাফল নিরূপণের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পরিসংখ্যান জানতে হবে।

৩. ফলাফলের উপস্থাপনা

বেশিরভাগ সময় গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলো বিভিন্ন গ্রাফ বা টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।  পরিসংখ্যান ব্যবহার করে আমরা গবেষণার ফলাফলগুলোকে স্পষ্ট ও যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি। টেবিল, গ্রাফ, চার্ট ইত্যাদি মাধ্যমে ডেটাকে সহজবোধ্য করা যায় কেবল মাত্র পরিসংখ্যান ব্যবহারের মাধ্যমেই। তাছাড়া পরিসংখ্যানের জ্ঞান না থাকলে আপনি সহজে ফলাফলের ইনসাইট বুঝতে পারবেন না।


এখন প্রশ্ন হলো পরিসংখ্যানের গুরুত্ব তো বুঝতে পারলাম। কিন্তু দক্ষতা অর্জন করবো কীভাবে? চলুন জেনে নেয়া যাক।

১. পরিসংখ্যানের মৌলিক ধারণাগুলো শিখুন

প্রথমেই আপনাকে পরিসংখ্যানের মৌলিক ধারণাগুলো শিখতে হবে। মীন, মিডিয়ান, মোড, স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন, প্রোবাবিলিটি ইত্যাদি বেসিক কনসেপ্টগুলো ভালোভাবে বোঝা উচিত। কারন এই ধারণা গুলোই বিভিন্ন সময় আপনার সামনে আসবে। মৌলিক ব্যাপারগুলো না জানলে অ্যাডভান্স লেভেলের পরিসংখ্যান আপনি বুঝতে পারবেন না।

২. অনলাইন কোর্স করুন

সাধারণত অনার্স লেভেলে আমরা পরিসংখ্যানের একটা বা দুইটা কোর্স করি। কিন্তু ঐ সময়টা আসলে শুধু মাত্র একটা জিপিএ এর জন্যই পড়াশোনা করা হয়। কিন্তু গবেষণায় পরিসংখ্যানের ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে আরো গভীরভাবে পরিসংখ্যান উপলব্ধি করতে হবে। অনলাইনে অনেক ভালো পরিসংখ্যান কোর্স রয়েছে। যেমন, কোরসেরা, ইউডেমি, খান একাডেমি ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে আপনি প্রায় বিনামূল্যে বা সাশ্রয়ী মূল্যে কোর্স করতে পারেন। তাছাড়া অনলাইনে নানা রকম রিসোর্স ব্যবহার করেও শিখতে পারেন। পড়া শুরু করবেন ব্যাকওয়ার্ড পদ্ধতিতে। তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে আপনি দক্ষ হয়ে যাচ্ছেন।

৩. স্ট্যাটিসটিক্যাল সফটওয়্যার ব্যবহার শিখুন

ডেটা থেকে ইনসাইট পেতে হলে ডেটার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। আর এই কারনে আপনাকে শিখতে হবে ডেটা এনালাইসিস। ডেটা এনালাইসি শেখার জন্য রয়েছে নানা রকমের টুলস বা সফটওয়্যার। প্রাথমিকভাবে SPSS, R, Python, Stata ইত্যাদি স্ট্যাটিসটিক্যাল সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার শিখুন। যে কোন একটাতে মোটামুটি লেভেলের দক্ষ হলে আপনার প্রয়োজনীয় কাজ চলে যাবে। SPSS, R, Python, Stata ব্যবহার করে আপনি ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারবেন এবং ফলাফল সহজেই বের করে আপনার গবেষণায় উপস্থাপন করতে পারবেন।

৪. গবেষণাপত্র পড়ুন

দুনিয়াতে পরিসংখ্যানের হাজার রকমের মডেল বা ধরন রয়েছে। আপনার তো সব জানার প্রয়োজন নেই, এমনকি সব জানা সম্ভবও না। ডেটার ন্যাচারের উপর নির্ভর করে কি ধরনের এনালাইসিস করবেন সেটা ঠিক করতে হয়। এই কারনে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গবেষণাপত্র পড়ুন এবং দেখুন কিভাবে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আপনার গবেষণার সাথে মিল রয়েছে সে সকল গবেষণাপত্র গুলো পড়ুন বেশি করে। সেগুলো নিয়ে স্টাডি করুন এবং কিভাবে এনালাইসিস করা হয়ে সেটা নিয়ে একটু পড়াশোনা করেন। এতে আপনি বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে শিখতে পারবেন।

৫. চ্যাট জিপিটি এবং অন্যান্য এআই টুল ব্যবহার

আজকের এআই যুগে, চ্যাট জিপিটি বা অন্যান্য এআই টুল ব্যবহার করে পরিসংখ্যান সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন। এটি আপনার শেখার প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করতে পারে। মজার ব্যাপার হলো আপনি যদি আপনার সংগ্রহ করা ডেটার ন্যাচার বলে দেন তাহলে এআই টুলস আপনাকে বলে দিবে কি ধরনের এনালাইসিস করবেন। অথবা প্রশ্ন করতে পারেন এই এনালাইসিসের জন্য কি ধরনের ডেটা প্রয়োজন। এতে করে আপনার সময় সেভ হবে দারুনভাবে। 

 

পরিসংখ্যান শেখা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এতে বেশ সময় লাগবে। তবে সঠিক পদ্ধতিতে শেখার মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুতই এতে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। বেসিক বিষয়গুলো জানার পরে আপনি আপনার গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় এনালাইসিস নিয়েই শুধু পরাশোনা করুন। এতে করি শেখার প্রক্রিয়াটা সহজ হবে। পাশাপাশি যারা পরিসংখ্যানে দক্ষ তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তারাও আপনাকে দারুনভাবে সহযোগিতা করবে।


Post a Comment

0 Comments